২০২২ সালের দাখিল পরীক্ষার্থীদের হাদিস শরীফ ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট সমাধান

 হাদিসের পরিচয়

হাদীস আরবী শব্দ। আরবী অভিধান কোরআনের ব্যবহার অনুযায়ীহাদীসশব্দের অর্থ- কথা,বাণী,বার্তা,সংবাদ,বিষয়,খবর ব্যাপার ইত্যাদি।

 


হাদীসশুধুমাত্র একটি আভিধানিক শব্দ নয়। মূলতঃহাদীসশব্দটি ইসলামের এক বিশেষ পরিভাষা। সে অনুযায়ী রাসূল(সাঃ)-এর কথা,কাজের বিবরণ কিংবা কথা,কাজের সমর্থন এবং অনুমোদন বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত,ইসলামী পরিভাষায় তাই-হাদীসনামে অভিহিত।

ব্যাপক অর্থে সাহাবীদের কথা,কাজ সমর্থন এবং তাবেয়ীদের কথা কাজ সমর্থনকেও হাদীস বলে।

 

কিন্তু,সাহাবা,তাবেয়ীগনের ন্যায় তাবে তাবেয়ীনের কথা,কাজ সমর্থনের বিবরণও যে কোরআন হাদীসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং বাস্তবে রূপায়নের দৃষ্টিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় জিনিস তাতে সন্দেহ নেই।

 

যেহেতু রাসূলে করীম (সাঃ),সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ী এবং তাবে তাবেয়ীগণের কথা কাজ সমর্থন একই মূল বিষয়কে কেন্দ্র করেই প্রচলিত, সেই জন্য মোটামুটিভাবে সবগুলিকেইহাদীসনামে অভিহিত করা হয়।

 

কিন্তু তবুও শরীয়তী মর্যাদার দৃষ্টিতে এই সবের মধ্যে পার্থক্য থাকায় প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা পরিভাষা নির্ধারণ করা হয়েছে। যথা- নবী করীম(সাঃ)-এর কথা কাজ অনুমোদনকে বলা হয়হাদীস

 

সাহাবাদের কথা কাজ অনুমোদনকে বলা হয়আছার তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীনদের কথা কাজ অনুমোদনকে বলা হয়ফতোয়া

 

হাদীসের উৎসঃ হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) আল্লাহ মনোনীত সর্বশ্রেষ্ঠ নবী রাসূল ছিলেন। সাথে সাথে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষও ছিলেন। এই জন্যে রাসূল(সাঃ)

 

বিভিন্ন আঙ্গিকে হাদিসের প্রকার

প্রাথমিকভাবে হাদীসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। . কাওলী হাদীস . ফেলী হাদীস . তাকরীরী হাদীস। সকল হাদীসই এই তিন ভাগে বিভক্ত। এখন জেনে নিই এই তিন প্রকারের হাদিস কাকে বলে।

 

১। কাওলী হাদীস: রাসূল (সঃ) এর কথামূলক বা বিবৃতি মূলক হাদিসকে কাওলী হাদীস বলে। অর্থাৎ কোন বিষয়ে রাসূল (সঃ) নিজে যা বলেছেন সেটাই হচ্ছে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রথম উৎস। এটাই কাওলী হাদীস।

যেমন: “হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেনরাসূল (সঃ) বলেছেন : ফাসিক ব্যক্তির প্রসংসা স্তুতি করা হলে আল্লাহতায়ালা অসন্তষ্ট ক্রুদ্ধ হন এবং কারনে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে।” (বায়হাকী)

 

আবু মাসউদ (রাঃ) হতে  বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন-মানুষ স্বীয় পরিবার  পরিজনের জন্য  পূন্যের আশায় যখন ব্যায় করে সেটা তখন তার জন্য  সদাকাহ হয়ে যায়।” (বুখারী , ১ম খন্ড, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদীস নং ; ৫৫)

 

২। ফেলী হাদীস: কর্মমূলক হাদীস রাসূল (সঃ) এর কাজ কর্ম চরিত্র আচারআচরনের মধ্য দিয়েই ইসলামের যাবতীয় বিধি বিধান রীতিনীতি পরিস্ফুট হয়েছে। ফলে তার সকল কাজই শরীয়তের ভিত্তি হিসেবে গন্য। অতএব যে সকল হাদীসে রাসূল (সঃ) এর কর্মের  বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাকে ফেলী হাদীস বলে। যেমন:

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূল (সাঃ) জুতা পরা , চুল আচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জন করা তথা প্রত্যেক কাজই ডান দিক থেকে আরম্ভ করতে পছন্দ করতেন ” ( বুখারী, ১ম খন্ড,তাওহীদ পাবলিকেশন্সহাদীস নং: ১৬৮)

 

৩। তাকরিরী  হাদীস: রাসূল (সাঃ) হতে অনুমোদন সমর্থন প্রাপ্ত কথা কাজ অর্থাৎ সাহাবীদের যে সকল কথা কাজে রাসূল (সাঃ) এর সম্মতি পাওয়া যায়  বা তিনি প্রতিবাদ বা নিষেধ করেন নাই  এবং যা হতে শরীয়তের দৃষ্টি ভঙ্গি জানতে পারা যায়, সেই সকল ঘটনা কাজের  উল্লেখিত হাদীসকে  তাকরিরী বা সমর্থনমূলক হাদীস বলে। যেমন:

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : আমরা রাসূল (সাঃ) এর সাথে সালাত আদায় করতাম আমাদের কেউ কেউ গরমের কারণে নিজ কাপরের উপর সিজদা করত ” ( বুখারী , ১ম খন্ড, তাওহীদ পাবলিকেশন্স , হাদীস নং: ৩৮৫)

হাদিসের মূল কথাটুকু যে সুত্র পরস্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌছেছে তাকেসনদবলে। এতে হাদীস বর্ণনাকারীর নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে। আর হাদীসের মূলকথা উহার শব্দ সমষ্টিকেমতনবলে।

 

রাবী বা হাদীস বর্ণনাকারীদের সনদের দিক থেকে হাদীস তিন প্রকার: ১। মারফু হাদীস ২। মাওকুফ হাদীস ৩। মাকতু হাদীস

 

১। মারফু হাদীস : যে হাদীসের সনদ (বর্ণনা পরস্পরা) রাসূল (সাঃ) পর্যন্ত পৌছেছে, অর্থাৎ যে সনদের ধারাবাহিকতা রাসূল (সাঃ) থেকে হাদীস গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত সুরক্ষিত আছে এবং মাঝে কোন রাবী বা  হাদীস বর্ণনাকারীর নাম বাদ পড়েনি তাকে মারফু হাদীস বলে

যেমন: যে সকল হাদীস এভাবে বর্ণিত হয়েছে – ”রাসূল (সাঃ) বলেছেন : ”, ” আমি রাসূল (সাঃ) কে  এভাবে করতে দেখেছিবা কোন সাহাবী বলেছেনআমি রাসূল (সাঃ) এর উপস্থিতিতে  এই কাজটি  করেছি কিন্তু তিনি ইহার প্রতিবাদ করেন নাইএভাবে বর্ণিত হাদীসগুলোকে মারফু হাদীস বলে

 

২। মাওকুফ হাদীস : যে হাদীসের বর্ণনাসূত্র ঊর্দ্ধদিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌছেছে অর্থাৎ যে সনদ সূত্রে কোন সাহাবীর কাজ, কথা বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাওকুফ হাদীস বলে। এর অপর নাম আসার।

যেমন: ”উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, জনৈক ইয়াহুদী তাকে বলল : হে আমিরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদী জাতির উপর অবতীর্ন হতো, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে খুশীর দিন হিসেবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন আয়াত? সে বললো: ”আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম” (সূরা মায়িদাহ্ /) উমর (রাঃ) বললেন এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নবী (সাঃ) এর উপর নাজিল হয়েছিল তা আমরা জানি, তিনি সে দিন আরাফায় দাড়িয়ে ছিলেন আর সেটি ছিল জুমআর দিন। ”(বুখারী ১ম খন্ড, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদীস নং : ৪৫)

 

৩। মাকতু হাদীস : যে হাদীসের সনদ কোন তাবেয়ীন পর্যন্ত পৌছেছে তাকে মাকতু হাদীস বলে।

যেমন: ”আমর ইবনুল মাইমূন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাহিলীয়্যাতের যুগে দেখেছি একটি বানরী ব্যাভীচার করার কারণে অনেকগুলো বানর একত্র হয়ে প্রস্তর নিক্ষেপ করে তাকে হত্যা করলো। আমিও তাদের সাথে প্রস্তর নিক্ষেপ করলাম।” (বুখারী, ৩য় খন্ড, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদীস নং: ৩৮৪৯)

 

হাদিসের গুরুত্ব

হাদিস ইসলামী শরীয়তের দ্বিতীয় অপরিহার্য প্রামাণিক মূূল ভিত্তি। যা ওহীর শ্রেণীভূক্ত। হাদিসকে ওহীয়েগায়রে মাত্বলবলা হয়।  স্বয়ং আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন -” মা ইয়ান্ত্বিক্বু আনিল হাওয়া ইন হুয়া ইল্লা ওয়াহয়ু ইউহা তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে থেকে

 

কিছু বলেন নি ওহী বা ঐশী প্রত্যাদেশ ব্যতীত। ( সূরা জম-৩১) ইসলামের যাবতীয় মৌলনীতি কোরআন দ্বারা  নির্ধারিত। আর হাদিস সে মৌলিক নীতিমালাকে ভিত্তি করে প্রায়োগিক ব্যবহারিক দিক নির্দেশনা দিয়েছে। পবিত্র ক্বোরআনে প্রায় পাঁচশো আয়াতে, সালাত সাওম,হজ্জ্ব যাকাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে হুকুম আহকাম মৌল নীতিমালাসমূহ সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো বাস্তবায়ন পালনের বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয় নি।

 

আল্লাহ তালার হুকুম নির্দেশনা মোতাবেক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কথা কাজের মাধ্যমে তথা স্বীয় জীবনে সকল হুকুম আহকাম বাস্তবায়ন করে  এর পালন পদ্ধতি নিজ অনুসারীদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর আলোচনার মাধ্যমে এর বিশদ বিবরণ প্রদান করত কোরআনের উপর আমল করার পথ সুগম করে দিয়েছেন।

 

আল ক্বোরআনের আদেশ নিষেধ মান্য করেই আল্লাহ্ আনুগত্য করতে হয়, এবং মহানবী (সা.) এর আদেশ নিষেধ তার অনুসৃত  বিধিবিধান মান্য করেই রাসূলের আনুগত্য করতে হয়।

 

যেমন আল্লাহ ফরমান –“ক্বুল ইন কুনতুম তুহিব্বুনাল্লাহা ফাত্তাবিউনি ইয়ুহবিব কুমুল্লাহ ওয়া ইয়াগফির লাকুম যুনুবাকুম ওয়াল্লাহু গাফুরুর রাহিমঅর্থাৎ আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহর মোহাব্বাত পেতে চাও তাহলে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন। এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

 

( আল ইমরান -৩১) ওয়া ইন তুত্বিউ ফাহতাদুযদি তোমরা তার আনুগত্য কর তাহলে হেদায়াত প্রাপ্ত হবে। মূলত রাসূলের আনুগত্য, আল্লাহর আনুগত্য।

 

আল্লাহ ফরমান –“মা  আতাকুুুমুর রাসুলু ফাখুযুহু ওয়ামা নাহাকুম আনহু ফানতাহুঅর্থাৎ  রাসূল তোমাদের কে যা দান করেন তা গ্রহন করো আর যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। (সুরা হাশর- ) সুতরাং

 

রাসুলের সুন্নাহ ইসলামের অপরিহার্য মূল নীতি।

 

হাদিস সংকলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবদ্দশায় সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদীসসমূহ অত্যান্ত আগ্রহ সহকারে মুখস্ত করে স্মৃতিপটে রাখতেন। আবার অনেকে মহানবী (সাঃ) এর অনুমতি সাপেক্ষে কিছু কিছু হাদীস লিখে রাখতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবদ্দশায় স্মৃতিপটে মুখস্ত করে রাখার সাথে সাথে কিছু হাদীস লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ ছিল। হযরত আলী, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণ কিছু কিছু হাদীস লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনআবদুল্লাহ ইবনে আমর ব্যতীত আর কোন সাহাবী আমার অপেক্ষা অধিক হাদীস জানতেননা। কারন,তিনি হাদীস লিখে রাখতেন আর আমি লিখতামনা।

 

মহানবী (সাঃ) এর জীবদ্দশায় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বহু কাজকর্ম লিখিতভাবে সম্পাদনা করা হতো। বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্তা, সরকারী কর্মচারী এবং জনসাধারনের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে লিখিত নির্দেশ প্রদান করা হতো। তাছাড়া রোম, পারস্য প্রভৃতি প্রতিবেশী দেশসমূহের সম্রাটদের সাথে পত্র বিনিময়, ইসলামের দাওয়াত এবং বিভিন্ন গোত্র সম্প্রদায়ের সাথে চুক্তি সন্ধি লিখিতভাবে সম্পাদন করা হতো। আর মহানবীর আদেশক্রমে যা লেখা হতো তা হাদীস বলে পরিচিত।

 

 

মহানবী (সাঃ) এর ওফাতের পর বিভিন্ন কারনে হাদীস সংকলনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কুরআন মাজীদের সাথে হাদীস সংমিশ্রণ হওয়ার আশংকায় কুরআন পুর্ণ গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত হাদীস লিপিবদ্ধ করতে কউ সাহস পায়নি। হযরত আবূ বকর (রাঃ) এর আমলে কুরআন মজীদ গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ হলে সাহাবীগণ হাদীস লিপিবদ্ধ করার ব্যপারে আর কোন বাধা আছে বলে অনুভব করেননি।

হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষভাগে সাহাবি তাবেয়ীগণ প্রয়োজন অনুসারে কিছু হাদীস লিপিবদ্ধ করেন।

অতঃপর উমাইয়া খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয () হাদীস সংগ্রহের জন্য মদীনার শাসনকর্তা আবু বকর বিন হাজম সহ মুসলিমবিশ্বের বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্তা আলিমগণের কাছে একটি ফরমান জারী করেন যে, আপনারা মহানবী (সাঃ) হাদীসসমূহ সংগ্রহ করুন। কিন্তু সাবধান! মহানবী (সাঃ) এর হাদীস ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহন করবেননা। আর আপনার নিজ নিজ এলাকায় মজলিস প্রতিষ্ঠা করে আনুষ্ঠানিকভাবে হাদীস শিক্ষা দিতে থাকুন। কেননা, জ্ঞান গোপন থাকলে তা একদিন বিলুপ্ত হয়ে যায়।

 

এই আদেশ জারীর পর মক্কা,মদীনা,সিরিয়া.ইরাক এবং অন্যান্য অন্ঞ্চলে হাদীস সংকলনের কাজ শুরু হয়। কথিত আছে যে, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী (রঃ) সর্বপ্রথম হাদীস সংগ্রহ এবং সংকলনে হাত দেন। কিন্তু তাঁর সংকলিত হাদীসগ্রন্থের বর্তমানে কোন সন্ধান পাওয়া যায়না। এরপর ইমাম ইবনে জুরাইজ () মক্কায়, ইমাম মালিক () মদীনায়, আবদুল্লাহ ইবনে ওয়াহাব () মিসরে, আব্দুর রাজ্জাক ইয়েমেনে, আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক খুরাসানে, এবং সূফিয়ান সাওরী হাম্মাদ ইবনে সালমা বসরায় হাদীস সংকলনে আত্ননিয়োগ করেন। যুগের ইমামগণ কেবল দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় হাদীসগুলো স্থানীয় হাদীস শিক্ষাকেন্দ্রে প্রাপ্ত হাদীসসমূহ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তাঁদের কউই বিষয়বস্তু হিসেবে বিন্যাশ করে হাদীসসমূহ লিপিবদ্ধ করেননি।

 

যুগে লিখিত হাদীস গ্রন্থসমূহের মধ্যে ইমাম মালিকেরমুয়াত্তাসর্বপ্রথম সর্বপ্রধান প্রমান্য হাদীসগ্রন্থ। ইমাম মালিকেরমুয়াত্তাগ্রন্থটি হাদীস সংকলনের ব্যপারে বিপূল-উৎসাহ উদ্দিপনার সৃষ্টি করেছিল। এটি হাদীসশাস্ত্র অধ্যায়নে মুসলিম মণিষীদের প্রধান আর্কষণে পরিনত হয়েছিল। এরই ফলশ্রূতিতে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বে সর্বত্র হাদীসচর্চার কেন্দ্র স্হাপিত হতে থাকে। ইমাম শাফঈ () এর কিতাবুলউম্মএবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলেরমাসনাদগ্রন্থদ্বয় হাদীসের উপর গুরুত্বপুর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।

 

অতঃপর হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে বিভিন্ন মণিষী মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অন্ঞ্চল থেকে প্রচুর হাদীস সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে বিখ্যাত হলেন ইমাম বুখারী (), ইমাম মুসলিম (), ইমাম আবূ দাউদ (), ইমাম তিরমিজী (), ইমাম নাসাঈ (), এবং ইমাম ইবনে মাজাহ () এদের সংকলিত হাদীস গ্রন্থগুলো হলো সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে আবূ দাউদ, জামিতিরমিযী, সূনানে নাসাঈ এবং সূনানে ইবনে মাজাহ্। এই ছয়খানা হাদীসগ্রন্থকে সন্মিলিতভাবে সিহাহ সিত্তাহ বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থ বলা হয়।

 

উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা কথা র্নিদ্বিধায় বলতে পারি যে, মহানবী (সাঃ) এর জীবদ্দশায় যে হাদীস সমূহ প্রধানত সাহাবীদের স্মৃতিপটে মুখস্ত ছিল তা ধীরে ধীরে লিখিত রুপ নেয় এবং আব্বাসিয় যুগে হাদীস লিপিবদ্ধের কাজ পরিসমাপ্ত হয়। এটিই হলো হাদীস সংকলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

 

 

 

Post a Comment

0 Comments